"যেমন সংসারীদের মধ্যে সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ তিন গুণ আছে; তেমনি ভক্তিরও সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ তিন গুণ আছে ।"
"সংসারীর সত্ত্বগুণ কিরকম জানো ? বাড়িটি এখানে ভাঙ্গা, ওখানে ভাঙ্গা - মেরামত করে না । ঠাকুরদালানে পায়রাগুলো হাগছে, উঠানে শেওলা পড়েছে হুঁশ নাই । আসবাবগুলো পুরানো, ফিটফাট করবার চেষ্টা নাই । কাপড় যা তাই একখানা হলেই হলো । লোকটি খুব শান্ত, শিষ্ট, দয়ালু, অমায়িক ; কারু কোনো অনিষ্ট করে না ।
"সংসারীর রজগুণের লক্ষণ আবার আছে । ঘড়ি, ঘড়ির চেন, হাতে দুই-তিনটা আংটি । বাড়ির আসবাব খুব ফিটফাট । দেয়ালে কুইনের ছবি, রাজপুত্রের ছবি, কোনো বড় মানুষের ছবি । বাড়িটি চুনকাম করা, যেন কোনখানে একটু দাগ নাই । নানারকমের ভালো পোশাক । চাকরদেরও পোশাক । এমনি এমনি সব ।
"সংসারীর তমোগুনের লক্ষণ - নিদ্রা, কাম, ক্রোধ, অহংকার এই সব ।
"আর ভক্তির সত্ত্ব আছে । যে ভক্তের সত্ত্বগুন আছে, সে ধ্যান করে অতি গোপনে । সে হয়ত মশারির ভিতর ধ্যান করে - সবাই জানছে ইনি শুয়ে আছেন, বুঝি রাত্রে ঘুম হয় নাই , তাই উঠতে দেই হচ্ছে । এদিকে শরীরের উপর আদর কেবল পেট চলা পর্যন্ত ; শাকান্ন পেলেই হলো । খাবার ঘটা নাই । পোশাকের আড়ম্বর নাই । বাড়ির আসবাবের জাঁকজমক নাই । আর সত্ত্বগুনী ভক্ত কখনো তোষামোদ করে ধন লয় না ।
"ভক্তির রজঃ থাকলে সে ভক্তের হয়ত তিলক আছে, রুদ্রাক্ষের মালা আছে । সেই মালার মধ্যে মধ্যে আবার একটি সোনার দানা । যখন পূজা করে, গরদের কাপড় পরে পূজা করে ।"
ভক্তির তমঃ যার হয়, তার বিশ্বাস জ্বলন্ত । ঈশ্বরের কাছে সেরূপ ভক্ত জোর করে । যেন ডাকাতি করে ধন কেড়ে লওয়া । "মারো কাটো বাঁধো!" এইরূপ ডাকাত পড়া ভাব ।
"কি! আমি তাঁর নাম করেছি - আমার আবার পাপ ! আমি তাঁর ছেলে । তাঁর ঐশ্বর্যের অধিকারী ! এমন রখ হওয়া চাই !
"তমোগুণকে মোড় ফিরিয়ে দিলে ঈশ্বর লাভ হয় । তাঁর কাছে জোর কর; তিনি তো পর নন, তিনি আপনার লোক । আবার দেখ , এই তমোগুণকে পরের মঙ্গলের জন্য ব্যবহার করা যায় । বৈদ্য তিন প্রকার - উত্তম বৈদ্য, মধ্যম বৈদ্য, অধম বৈদ্য । যে বৈদ্য এসে নাড়ী টিপে 'ঔষধ খেও হে' এই কথা বলে চলে যায়ে, সে অধম বৈদ্য - রোগী খেলে কিনা এ খবর সে লয় না। যে বৈদ্য রোগীকে ঔষধ খেতে অনেক করে বুঝায়ে - যে মিষ্ট কথাতে বলে, 'ওহে ঔষধ না খেলে কেমন করে ভালো হবে! লক্ষীটি খাও, আমি নিজে ঔষধ মেড়ে দিচ্ছি খাও' - সে মধ্যম বৈদ্য । আর যে বৈদ্য, রোগী কোনো মতে খেলে না দেখে বুকে হাঁটু দিয়ে জোর করে ঔষধ খাইয়ে দেয় - সে উত্তম বৈদ্য । এই বৈদ্যের তমোগুণ, এ- গুণে রোগীর মঙ্গল হয়, অপকার হয় না ।
"বৈদ্যের মতো আচার্যও তিন প্রকার । ধর্মোপদেশ দিয়ে শিষ্যদের আর কোনো খবর লয় না - সে আচার্য অধম। যিনি শিষ্যদের মঙ্গলের জন্য তাদের বরাবর বুঝান, যাতে তারা উপদেশগুলি ধারণা করতে পারে, অনেক অনুনয়-বিনয় করেন, ভালবাসা দেখান - তিনি মধ্যম থাকার আচার্য । আর যখন শিষ্যেরা কোনো মতে শুনছে না দেখে কোনো আচার্য জোর পর্যন্ত করেন, তাঁরে বলি উত্তম আচার্য । "
No comments:
Post a Comment