Holy Trio

Holy Trio

Monday, February 27, 2012

পাপবাদ - কথামৃত

প্রতিবেশী - আমরা পাপী, আমাদের কি হবে ?
শ্রীরামকৃষ্ণ - তাঁর নামগুণকীর্তন করলে দেহের সব পাপ পালিয়ে যায়  । দেহবৃক্ষে পাপপাখি; তাঁর নামকীর্তন যেন হাততালি দেওয়া । হাততালি দিলে যেমন বৃক্ষের উপরের পাখি সব পালায়, তেমনি সব পাপ তাঁর নামগুণকীর্তনে চলে যায় ।
"আবার দেখ, মেঠো পুকুরের জল সূর্যের তাপে আপনা-আপনি শুকিয়ে যায় । তেমনি তাঁর নামগুণকীর্তনে পাপ-পুষ্করিনীর জল আপনা-আপনি শুকিয়ে যায় ।
"রোজ অভ্যাস করতে হয় । সার্কাসে দেখে এলাম ঘোড়া দৌড়ুচ্ছে, তার বিবি একপায়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে । কত অভ্যাসে ঐটি হয়েছে ।
 "আর তাঁকে দেখবার জন্য অন্তত একবার করে কাঁদ ।
"এই দুটি উপায় - অভ্যাস আর অনুরাগ, অর্থাৎ তাঁকে দেখবার জন্য ব্যাকুলতা ।"


Friday, February 24, 2012

ঈশ্বর কি নিষ্ঠুর ? - কথামৃত

সুখ দুঃখের কথা হইতেছে । ঈশ্বর এত দুঃখ কেন করেছেন?
মাস্টার - বিদ্যাসাগর অভিমান করে বলেন, "ঈশ্বর কে  ডাকবার আর কি দরকার ! দেখ চেঙ্গিস খান যখন লুটপাট আরম্ভ করলে তখন অনেক লোককে বন্দী  করলে; ক্রমে প্রায় এক লক্ষ বন্দী জমে গেল । তখন সেনাপতিরা এসে বললে মহাশয়, এদের খাওয়াবে কে? সঙ্গে এদের রাখলে আমাদের বিপদ । কি করা যায়? ছেড়ে দিলেও বিপদ । তখন চেঙ্গিস খান বললেন, তাহলে কি করা যায় । ওদের সব বধ কর । তাই কচাকচ করে কাটবার হুকুম হয়ে গেল । এই হত্যাকান্ড তো ঈশ্বর দেখলেন? কই একটু নিবারণ তো করলেন না। তা তিনি থাকেন থাকুন, আমার দরকার বোধ হচ্ছে না । আমার তো কোন উপকার হলো না ।"
শ্রীরামকৃষ্ণ - ঈশ্বরের কার্য কি বুঝা যায়, তিনি কি উদ্দেশ্যে কি করেন? তিনি সৃষ্টি, পালন, সংহার সবই করছেন । তিনি কেন সংহার করছেন আমরা কি বুঝতে পারি? আমি বলি, মা, আমার বোঝবারও দরকার নাই, তোমার পাদপদ্মে ভক্তি দিও । মানুষ জীবনের উদ্দেশ্য এই ভক্তিলাভ । আর সব মা জানেন । বাগানে আম খেতে এসেছি; কত গাছ, কত ডাল, কত কোটি পাতা -  এ সব বসে বসে হিসাব করবার আমার কি দরকার ! আমি আম খাই, গাছপাতার হিসাবে আমার দরকার নাই ।

Monday, February 20, 2012

কথামৃত

"দেখ ! ঈশ্বরকে দেখা যায় । 'অবাংমনসোগোচর' বেদে বলেছে : এর মানে বিষয়াসক্ত মনের অগোচর । বৈষ্ণবচরণ বলত , তিনি শুদ্ধ মন, শুদ্ধ বুদ্ধির গোচর । তাই সাধুসঙ্গ, প্রার্থনা, গুরুর উপদেশ এই সব প্রয়োজন । তবে চিত্তশুদ্ধি হয় । তবে তাঁর দর্শন হয় । ঘোলা জলে নির্মলি ফেললে পরিষ্কার হয় । তখন মুখ দেখা যায় । ময়লা আরশিতেও মুখ দেখা যায়ে না ।
"চিত্তশুদ্ধির  পর ভক্তিলাভ করলে, তবে তাঁর কৃপায় তাঁকে দর্শন হয় । দর্শনের পর আদেশ পেলে তবে লোকশিক্ষা দেওয়া যায় । আগে থাকতে লেকচার দেওয়া ভাল নয় ।
"হৃদয়্মন্দির আগে পরিষ্কার করতে হয়; ঠাকুর প্রতিমা আনতে হয়; পূজার আয়োজন করতে হয় । কোন আয়োজন নাই, ভো ভো করে শাঁক বাজানো, তাতে কি হবে? "
"আচ্ছা, তোমরা অত পাপ পাপ বললে কেন? একশোবার "আমি পাপী" "আমি পাপী" বললে তাই হয়ে যায় । এমন বিশ্বাস করা চাই যে, তাঁর নাম করেছি - আমার আবার পাপ কি? তিনি আমাদের বাপ-মা; তাঁকে বল যে, পাপ করেছি, আর কখনও করব না । আর তাঁর নাম কর, তাঁর নামে সকলে দেহ-মন পবিত্র কর - জিহ্বাকে পবিত্র কর ।

Friday, February 17, 2012

জাতিভেদ - কথামৃত

" এক উপায়ে জাতিভেদ উঠে যেতে পারে । সে উপায় - ভক্তি । ভক্তের জাতি নাই । ভক্তি হলেই দেহ, মন, আত্মা - সব শুদ্ধ হয় । গৌর, নিতাই হরিনাম দিতে লাগলেন, আর আচন্ডালে কোল দিলেন । ভক্তি না থাকলে ব্রাহ্মণ, ব্রাহ্মণ নয় । ভক্তি থাকলে চন্ডাল, চন্ডাল নয় । অস্পৃশ্য জাতি ভক্তি থাকলে শুদ্ধ, পবিত্র হয় ।"

Hindu Women

"The very peculiarity of Hindu women, which they have developed and which is the idea of their life, is that of the mother. If you enter a Hindu's home, you will not find the wife to be the same equal companion of the husband as you find her here. But when you find the mother, she is the very pillar of the Hindu home. The wife must wait to become the mother, and then she will be everything.

If one becomes a monk, his father will have to salute him first because he has become a monk and is therefore superior to him. But to his mother he — monk or no monk — will have to go down on his knees and prostrate himself before her. He will then put a little cup of water before her feet, she will dip her toe in it, and he will have to drink of it. A Hindu son gladly does this a thousand times over again!

Where the Vedas teach morality, the first words are, “Let the mother be your God" (Taittiriya Upanishad 1.11.) — and that she is. When we talk of woman in India, our idea of woman is mother. The value of women consists in their being mothers of the human race. That is the idea of the Hindu.

I have seen my old master taking little girls by the hands, placing them in a chair and actually worshiping them — placing flowers at their feet and prostrating himself before these little children — because they represented the mother God.

The mother is the God in our family. The idea is that the only real love that we see in the world, the most unselfish love, is in the mother — always suffering, always loving. And what love can represent the love of God more than the love which we see in the mother? Thus the mother is the incarnation of God on earth to the Hindu.

"That boy alone can understand God who has been first taught by his mother."...

...The love which my mother gave to me has made me what I am, and I owe a debt to her that I can never repay.

Why should the Hindu mother be worshiped? Our philosophers try to find a reason and they come to this definition: We call ourselves the Aryan race. What is an Aryan? He is a man whose birth is through religion. This is a peculiar subject, perhaps, in this country; but the idea is that a man must be born through religion, through prayers. If you take up our law books you will find chapters devoted to this — the prenatal influence of a mother on the child.

I know that before I was born, my mother would fast and pray and do hundreds of things which I could not even do for five minutes. She did that for two years. I believe that whatever religious culture I have, I owe to that. It was consciously that my mother brought me into the world to be what I am. Whatever good impulse I have was given to me by my mother — and consciously, not unconsciously.

"A child materially born is not an Aryan; the child born in spirituality is an Aryan." For all this trouble — because she has to make herself so pure and holy in order to have pure children — she has a peculiar claim on the Hindu child. And the rest [of her traits] is the same with all other nations: she is so unselfish. But the mother has to suffer most in our families.

The mother has to eat last...

The first part of the food — when it is ready — belongs to the guests and the poor, the second to the lower animals, the third to the children, the fourth to the husband, and last comes the mother. How many times I have seen my mother going to take her first meal when it was two o'clock. We took ours at ten and she at two because she had so many things to attend to. [For example], someone knocks at the door and says, "Guest", and there is no food except what was for my mother. She would give that to him willingly and then wait for her own. That was her life and she liked it. And that is why we worship mothers as gods.
 ...
 Now the Hindu has developed this side. But will this side be enough? Let the Hindu woman who is the mother become the worthy wife also, but do not try to destroy the mother. That is the best thing you can do...

And similarly, I think (I tell it with the best spirit) that you had better add to your national character a little more of the mother side of the Hindu nature! This was the first verse that I was taught in my life, the first day I went to school: "He indeed is a learned man who looks upon all women as his mother, who looks upon every man's property as so much dust, and looks upon every being as his own soul".

There is the other idea of the woman working with the man. It is not that the Hindus had not those ideals, but they could not develop them.

It is alone in the Sanskrit language that we find four words meaning husband and wife together. It is only in our marriage that they [both] promise, "What has been my heart now may be thine". It is there that we see that the husband is made to look at the Pole-star, touching the hand of his wife and saying, "As the Pole-star is fixed in the heavens, so may I be fixed in my affection to thee". And the wife does the same.

[In the earlier part of the same lecture, the part that precedes this section, Swamiji had said the following]

The oldest Sanskrit poem in existence, the Ramayana, has embodied the loftiest Hindu ideal of a woman in the character of Sitâ...

There is another peculiar conception of the Hindu. Those who have been studying with me are aware that the central conception of Hindu philosophy is of the Absolute; that is the background of the universe. This Absolute Being, of whom we can predicate nothing, has Its powers spoken of as She — that is, the real personal God in India is She. This Shakti of the Brahman is always in the feminine gender.

Rama is considered the type of the Absolute, and Sita that of Power...I will quote a passage from her life that is very much suited to the ladies of this country.

The picture opens when she was in the forest with her husband, whither they were banished. There was a female sage whom they both went to see. Her fasts and devotions had emaciated her body.

Sita approached this sage and bowed down before her. The sage placed her hand on the head of Sita and said: "It is a great blessing to possess a beautiful body; you have that. It is a greater blessing to have a noble husband; you have that. It is the greatest blessing to be perfectly obedient to such a husband; you are that. You must be happy".

Sita replied, "Mother, I am glad that God has given me a beautiful body and that I have so devoted a husband. But as to the third blessing, I do not know whether I obey him or he obeys me. One thing alone I remember, that when he took me by the hand before the sacrificial fire — whether it was a reflection
of the fire or whether God himself made it appear to me — I found that I was his and he was mine. And since then, I have found that I am the complement of his life, and he of mine"."
 - SV, ‘The Women of India’, Cambridge, 17 December 1894

[Lecture delivered to an audience of Western women with the purpose of addressing some well-entrenched misconceptions of the West about India. This was one of his early lectures in the West - in fact, about a year or so after the Parliament of Religions - in his first round of visit to the West, where he was required to explain many aspects of Indian culture. The complete lecture is lengthy and complex, touching over various issues starting from womanhood to the synthesis of world civilizations. You may have access to the whole lecture in Complete Works vol. 9 (section 'Lectures & Discourses'), which is also available online]

Description: http://mail.google.com/mail/images/cleardot.gif

Wednesday, February 15, 2012

মনুষ্য প্রকৃতি ও গুণত্রয় - কথামৃত

"যেমন সংসারীদের মধ্যে সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ তিন গুণ আছে; তেমনি ভক্তিরও সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ তিন গুণ আছে ।"
"সংসারীর সত্ত্বগুণ কিরকম জানো ? বাড়িটি এখানে ভাঙ্গা, ওখানে ভাঙ্গা - মেরামত করে না । ঠাকুরদালানে পায়রাগুলো হাগছে, উঠানে শেওলা পড়েছে হুঁশ নাই । আসবাবগুলো পুরানো, ফিটফাট করবার চেষ্টা নাই । কাপড় যা তাই একখানা হলেই হলো । লোকটি খুব শান্ত, শিষ্ট, দয়ালু, অমায়িক ; কারু কোনো অনিষ্ট করে না ।
"সংসারীর রজগুণের লক্ষণ আবার আছে । ঘড়ি, ঘড়ির চেন, হাতে দুই-তিনটা আংটি । বাড়ির আসবাব খুব ফিটফাট । দেয়ালে কুইনের ছবি, রাজপুত্রের ছবি, কোনো বড় মানুষের ছবি । বাড়িটি চুনকাম করা, যেন কোনখানে একটু দাগ নাই । নানারকমের ভালো পোশাক । চাকরদেরও পোশাক । এমনি এমনি সব ।
 "সংসারীর তমোগুনের লক্ষণ - নিদ্রা, কাম, ক্রোধ, অহংকার এই সব ।
"আর  ভক্তির সত্ত্ব আছে । যে ভক্তের সত্ত্বগুন আছে, সে ধ্যান করে অতি গোপনে । সে হয়ত মশারির ভিতর ধ্যান করে - সবাই জানছে ইনি শুয়ে আছেন, বুঝি রাত্রে ঘুম হয় নাই , তাই উঠতে দেই হচ্ছে । এদিকে শরীরের উপর আদর কেবল পেট চলা পর্যন্ত ; শাকান্ন পেলেই হলো । খাবার ঘটা নাই । পোশাকের আড়ম্বর নাই । বাড়ির আসবাবের জাঁকজমক নাই । আর সত্ত্বগুনী ভক্ত কখনো তোষামোদ করে ধন লয় না ।
"ভক্তির রজঃ থাকলে সে ভক্তের হয়ত তিলক আছে, রুদ্রাক্ষের মালা আছে । সেই মালার মধ্যে মধ্যে আবার একটি সোনার দানা । যখন পূজা করে, গরদের কাপড় পরে পূজা করে ।"
ভক্তির তমঃ যার হয়, তার বিশ্বাস জ্বলন্ত । ঈশ্বরের কাছে সেরূপ ভক্ত জোর করে । যেন ডাকাতি করে ধন কেড়ে লওয়া । "মারো কাটো বাঁধো!" এইরূপ ডাকাত পড়া ভাব ।
"কি! আমি তাঁর নাম করেছি - আমার  আবার পাপ ! আমি তাঁর ছেলে । তাঁর ঐশ্বর্যের অধিকারী ! এমন রখ হওয়া চাই !
"তমোগুণকে মোড় ফিরিয়ে দিলে ঈশ্বর লাভ হয় । তাঁর কাছে জোর কর; তিনি তো  পর নন, তিনি আপনার লোক । আবার দেখ , এই তমোগুণকে পরের মঙ্গলের জন্য ব্যবহার করা যায় । বৈদ্য তিন প্রকার - উত্তম বৈদ্য, মধ্যম বৈদ্য, অধম বৈদ্য । যে বৈদ্য এসে নাড়ী টিপে 'ঔষধ খেও হে' এই কথা বলে চলে যায়ে, সে অধম বৈদ্য - রোগী খেলে কিনা এ খবর সে লয় না। যে বৈদ্য রোগীকে ঔষধ খেতে অনেক করে বুঝায়ে - যে মিষ্ট কথাতে বলে, 'ওহে ঔষধ না খেলে কেমন করে ভালো হবে! লক্ষীটি খাও, আমি নিজে ঔষধ মেড়ে দিচ্ছি খাও' - সে মধ্যম বৈদ্য । আর যে বৈদ্য, রোগী কোনো মতে খেলে না দেখে বুকে হাঁটু দিয়ে জোর করে ঔষধ খাইয়ে দেয় - সে উত্তম বৈদ্য । এই বৈদ্যের তমোগুণ, এ- গুণে রোগীর মঙ্গল হয়, অপকার হয় না ।
 "বৈদ্যের মতো আচার্যও তিন প্রকার । ধর্মোপদেশ দিয়ে শিষ্যদের আর কোনো খবর লয় না -  সে আচার্য অধম। যিনি শিষ্যদের  মঙ্গলের জন্য তাদের বরাবর বুঝান, যাতে তারা উপদেশগুলি ধারণা করতে পারে, অনেক অনুনয়-বিনয় করেন, ভালবাসা দেখান - তিনি মধ্যম থাকার আচার্য । আর যখন শিষ্যেরা কোনো মতে শুনছে না দেখে কোনো আচার্য জোর পর্যন্ত করেন,  তাঁরে বলি উত্তম আচার্য । "